স্পিরিট লেভেল
কোনো কাজের বা বস্তুর পৃষ্ঠতল সমতল আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য স্পিরিট লেভেল যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। স্পিরিট লেভেলের তলদেশ খুবই সমতল থাকে। এর বডির উপরের দিকে এক বা একাধিক কাচের নল থাকে। নলগুলোকে সাধারণত হলুদ রঙের ইথানল বা স্পিরিট জাতীয় পদার্থ ঢুকানো থাকে। এর সাথে অল্প পরিমাণ বায়ুও থাকে। লেভেলটি শায়িত অবস্থায় রাখলে উপরের দিকে অবস্থানরত প্রান্তের দিকে বায়ুর বুদ্বুদ সরে যায়। ফলে কোনো বস্ত্তর ভূমিতল সমতল সঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়।
বিভিন্ন প্রকার স্পিরিট লেভেলের বর্ণনা১. সার্ভেয়র লেভেলিং যন্ত্রপাতি(Surveyor’s Leveling Instrument) :
এগুলো বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- টিলটিং লেভেল (Tilting Level), ডাম্পি লেভেল (Dumpy Level) বা অটোমেটিক লেভেল (Automatic Level)।
গঠন এবং কার্যপ্রণালি:
এ ধরনের যন্ত্রে ক্রসহেয়ার যুক্ত একটি টেলিস্কোপের উপর একটি স্পিরিট লেভেল বসানো থাকে। যন্ত্রটি তেপায়ার ওপর বসানো থাকে। একজন দর্শক যন্ত্রটির সামনে পেছনে দুটি স্টাফ পাঠ নেয়। এ থেকে ঐ দুটো স্টেশনের উচ্চতার পার্থক্য জানা যায়। শুরুর বিন্দুর এলিভেশন জেনে উপরের পদ্ধতি মতো রিডিং নিয়ে অনেক বড় দূরত্বের মধ্যকার উচ্চতার পার্থক্য এবং এলিভেশন জানা যায়।
ব্যবহার: জরিপ কাজে দীর্ঘ দূরত্বের মধ্যকার স্থানগুলোর উচ্চতার পার্থক্য বের করতে।
২. কাঠমিস্ত্রির লেভেল(Carpenter’s Level) :
একটি সাধারণ কারপেনটরস লেভেল দেখতে একটি কাঠ খন্ডের মতো। এর বেশ চওড়া বেজ থাকে যা লেভেলটির স্থায়িত্ব এবং পৃষ্ঠ তলের যথাযথভাবে পরিমাপ নিশ্চিত করে।
গঠন এবং কার্যপ্রণালি:
স্পিরিট লেভেলের সাধারণত তিনটি টিউব থাকে। চিত্রে দেখানো আনুভূমিকভাবে ৪৫০ হেলানো অবস্থানে। পৃষ্ঠতল সমতল হলে বাবল কোথায় থাকবে তা লেভেলে দাগ কেটে দেওয়া থাকবে। কোনো কোনো লেভেলে বাঁকানো টিউব থাকে যা বাবল দ্রুত নিচে নামতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: নির্মাণকাজে বিশেষত কাঠের কাজে সঠিকভাবে উল্লম্ব, আনুভূমিক এবং ৪৫০ ঢাল মাপতে কারপেনটারস লেভেল ব্যবহার করা হয়।
৩. ম্যাশনস লেভেল (Mason’s Level) : কারপেনটারস লেভেলের মতোই তবে আকারে ম্যাশনস লেভেল একটু বড়।
৪. টরপিডো লেভেল(Torpedo level) :
সাধারণত ৬ ইঞ্চি থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা। মাথার দিকটা দেখতে অনেকটা নৌকার মতো। সংকীর্ণ স্থানে লেভেল নিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. লাইন লেভেল(Line Level) : নির্মাণকাজে ঝুলানো তারের সাথে যে লেভেল ঝুলানো হয় তাকে লাইন লেভেল বলে। এই লেভেলের সাথে উভয় প্রান্তে ছোট হুক থাকে যা দিয়ে তারে ঝুলানো হয়। এটি ওজনে খুবই হালকা ফলে এটি ঝুলালে তার কোনো রকম বিচ্যুতি হয় না। এর সাইজ এমন হয় যেন এটি তারের সাথে ঝুলানোর পর তারের দুই প্রান্ত লেভেলের পৃষ্ঠকে প্রসারিত করে।
ব্যবহার: দু’টি বিন্দু একই লেভেলে আছে কি না (যেমন- একই ফ্লোরের দু’বিন্দু) তা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। এটি অবশ্যই শক্ত করে বাঁধা রশির সাথে ব্যবহার করতে হয়।
৬. ইঞ্জিনিয়ারস প্রিসিশন লেভেল(Engineer’s Precision Level) :
একে মাস্টার প্রিসিশন লেভেলও বলা হয়। এতে একটি বড় দাগ কাটা আনুভূমিক প্রধান ভাইএল থাকে। লেভেলের উপরে এবং নিচে খুব সমান্তরালভাবে তৈরি করা হয়। এটি প্রধান ভাইএলের সাহায্যে প্রকৃত আনুভূমিক নির্ণয় করতে ভিত্তির তলে বা যাতে তৈরি সামগ্রী সঠিক মাপের হয় সেজন্য কোন মেশিনের পৃষ্ঠ ব্যবহৃত হয়। দুই প্রান্তের ছোট ভাইএল এর সাহায্যে প্রকৃত উলম্ব নির্ণয় করা যায়।
৭. মেশিনিস্ট লেভেল(Machinist’s Level) :
এতে একটি বড় আকৃতির ভাইএল থাকে। এটি এর সঠিকতা এবং সূক্ষ্মতা বৃদ্ধি করে। কোনো কোনো লেভেলের ঢেউযুক্ত তল থাকে ফলে পাইপ, স্যাফট ইত্যাদির উপর সহজে সরানো যায়। মেশিন সপে কাজ বা যন্ত্রপাতি লেভেলিং এ এটি ব্যবহৃত হয়।
৮. আয়রন বেঞ্চ লেভেল(Iron Bench Level) :
এটি বিশেষভাবে ঢালাই করা যা এর ওজন হালকা করে এবং শক্তি ও দৃঢ়তা নিশ্চিত করে।
৯. স্ট্রিডিং লেভেল(Striding Level) :
এটি একটু উঁচু ভিত্তির ওপর থাকে। তার, পাইপ ইত্যাদির সমতলতা পরীক্ষা করতে এটি ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন স্পিরিট লেভেলের ব্যবহার
ছাদের ঢাল পরীক্ষা করতে।
ল্যান্ড স্কেপের ঢাল যাচাই করতে।
ডেকের উপর দিয়ে পানি যাওয়ার জন্য এর ঢাল পরীক্ষা করতে।
পোর্চ এবং স্লাবের ঢাল যাচাই করতে।
পানির নিচে প্লাম্বিং এর কাজের ঢাল যাচাই করার জন্য।