রিয়েল এস্টেট ধসের নমুনা (ছদ্ম নামে কিন্তু সত্য)
Md. Ashraful Haque, 12-Aug-2005
ভিউ : 122132
রাজনৈতিক অস্থিরাত, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি, জ্বালানী তেলের দাম এবং কাজের প্রতকুল পরিবেশের জন্য আমাদের আবাসন খাত আজ হুমকির মুখে। এমন অনেক ছোট বা বড় কোম্পনি আছে যারা তাদের এই ব্যবসা বা শিল্পটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আরও একটি কারণ হলো যে বর্তমানে এই খাতে ব্যাংক ঋণের সুবিধাও নাই। সাম্প্রতি একটি এমনই ধসে যাওয়া কোম্পানি সাথে কথা বলেছিলাম আমরা। কোম্পানির নাম এবং অন্যন্য তথ্য ছদ্ম নামে প্রকাশ করে ছাপানো হলো।
কোম্পানি তথ্য
কোম্পানি নাম : ছদ্মপাতার নীড়
কোম্পানী প্রতিষ্ঠা : মার্চ 1995
বন্ধ: ফেব্রুয়ারী 2013
"ছদ্মপাতার নীড়" এই প্রতিস্ঠানটি প্রতিস্ঠিত হয় মার্চ 1995 সালে। এর পুর্বে এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কন্টাকটার বা ঠিকাদার হিসাবে কাজ করতো। 2000 সালে বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠান টাওয়ার বি.টি.এস রুম নির্মাণের কাজ শুরু করে, এবং এই ক্ষেত্র তারা ঠিকাদার নিয়োগ করে। ছদ্মপাতা তখন টেলিকমের টাওয়ার ও বি.টি.এস রুম নির্মাণের অনেক কাজ পায়। একই সময় বিপুল চাহিদার কারণে অনেক ছোট ছোট বিনিয়োগকারী এই টেলিকমের কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু 2006-2007 এর দিকে টাওয়ার বা বি.টি.এস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পরিমাণ বেশি হওয়াতে একটি বিশাল ধস নামে। তখন অনেকেই পথে বসে যায়। কিন্তু ছদ্মপাতার যেহেতু এর পাশাপাশি রিয়েলএস্টেট কোম্পানিতে ঠিকাদারি কাজ করতো, তারা পথে বসে না। তারা ঠিকাদারি কাজ চালিয়ে যায় এবং পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারী কাজের সহ-ঠিকাদারি করতে থাকে। কিন্তু কিছু কারনে 2011 সালের পর তারা তাদের কার্য্যক্রম ব্ন্ধ করা শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন " রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠান ভুক্তভোগী। এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হযেছে এবং আমাদের ক্লায়েন্টের পরিমাণ খুব কমতে থাকে। একই সাথে বাজারে দাম কমতে থাকে। অনেক আবাসন প্রতিস্ঠান তাদের কাজ ধীরে করা শুরু করে এবং আমাদের অনেক কোম্পানির সাথে চুক্তি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হযে যায়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। " বর্তমানে এই অস্থিরতা শুধু বাড়ছেই না, বরং প্রতি সপ্তাহে হরতালের মত ঘটনা ঘটতে থাকছে। এই হরতালের কারণে মালামাল সাইটে আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। একই সাথে কাজ করার মিস্ত্রি,ইঞ্জিনিয়ার,হেলপার ইত্যাদি সাইটে আসতে পারছে না। এর কারণে প্রজেক্টের কাজ ধীরে হচ্ছে এবং বিঘ্ন হচ্ছে, যা একটি প্রজেক্টের জন্য খুবই খারাপ। চুক্তি হওয়ার সময় মালামালের দাম ও বর্তমানের দামের ব্যাপক পার্থক্য থাকার কারণে কাজ করাও অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের মালিকের আরও একটি অভিযোগ " দ্রব্যমুল্যের বৃদ্ধি সবচেয়ে বড় একটা ইস্যু। দশ থেকে ষাট শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে কনস্ট্রাকশন মালামালের গত 2009-2011 সালে। এই দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি আমাদের চুক্তি অনুযায়ি কাজ করতে দেয় না। কেননা চুক্তি থেকে দাম বেশি হয় কয়েক গুন। যার কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থায় এই পেশাকে ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।"
নিচের সারণী থেকে আমরা একটা ধারণা পাবো যে কি পরিমাণ মুল্য বৃদ্ধি হযেছে।
ক্রম | মালামাল | ২০০৯ ( টাকা ) | ২০১১ ( টাকা ) | শতকরা বৃদ্ধি |
১ | সিমেন্ট | ৩৫০ / ব্যাগ | ৪৬৫ / ব্যাগ | ৩৩% |
২ | পাথর | ১০০ / সি.এফ.টি | ১৫৫ / সি.এফ.টি | ৫৫% |
৩ | বালি | ২৮ / সি.এফ.টি | ৩৬ / সি.এফ.টি | ২৯% |
৪ | রড | ৫৫০০০/ টন | ৭৩০০০ / টন | ৩৩% |
এই সারণী থেকে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। কাচামালের আমদানি সমস্যা, উৎপাদনকারীর খরচ এবং পরিবহণ খরচ এই মুল্য বৃদ্ধির কারণ। গত বছর জ্বালানী তেলের মুল্য 2009 এর পর পাঁচবার বাড়ানো হয়েছে। এটিও কনস্ট্রাকশন এর খরচ বাড়ানোর একটি প্রভাবক।
"ছদ্মপাতার নীড়" এর বিনিয়োগকারিরা বলেছেন " আমরা ব্যাংক লোনের জন্য কয়েকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা এই লোন পাইনি, এরই ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। এমন অসংখ্য সমস্যার মধ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব"। 2009-2011 তে হাজার কোটি টাকার ব্যংক দুর্ণিতি হয়েছে। হলমার্ক 2600 কোটি টাকা দুর্ণীতির মাধ্যমে তুলেছে, আর এই কাজে সহায়তা করেছে ব্যাংকের দুর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা। এরই ফল স্বরুপ অনেক ছোট ছোট বিনিয়োগকারী এখন লোন পাচ্ছে না।
আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্রের একটি উদাহরণ এই "ছদ্মপাতার নীড়"। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে কনস্ট্রাকশন শিল্প থেকে। এই শিল্পে বেকারত্বের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমার আকুল আবেদন, " আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা আপনারা বোঝার চেস্টা করেন। আপনাদের রাজনৈতিক নোংরা খেলা, দেশ ও জনগনের স্বার্থে বন্ধ করুন। আমরা সুন্দর একটি দেশ ও সমাজ চাই।
মন্তব্য সমুহ