ভূমিকা
পাওয়ার ট্রান্সফরমার তৈরী করতে চান অনেকেই। এই লেখার মাধ্যমে এটি তৈরী করবার প্রয়োজনীয় ক্যালকুলেশন দেখাবো। সেই সাথে এই ক্যালকুলেশন প্রকৃয়াটি সহজ করবার জন্য একটি ক্যালকুলেটর ও দেবো। এবং এই ট্রান্সফরমার ক্যালকুলেটর টির ব্যবহার উদাহরণ সহ দেখাবো। তার আগে ট্রান্সফরমার এর বিভিন্ন অংশ, প্রকারভেদ, গঠন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চলুন জেনে নেই।
পরিচ্ছেদসমূহ [আড়াল করুন]
- 1 ভূমিকা
- 2 ট্রান্সফরমার কাকে বলে
- 3 ট্রান্সফরমার কত প্রকার
- 4 একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- 5 প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কিভাবে নির্ণিত হয়
- 6 মূলনীতি
- 7 ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন অংশ সমূহ
- 8 কোর
- 9 কন্ডাক্টর
- 10 ববিন
- 11 ট্রান্সফরমার তৈরি করবার ডিজাইন ও হিসাব
- 12 কোর এর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল (Area) নির্ণয়
- 13 এরিয়া ও পাওয়ারের সমীকরণ
- 14 কয়েলের জন্য পাক সংখ্যা (Number of turns, N) নির্ণয়
- 15 উদাহরণ
- 16 ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব
- 17 ক্যালকুলেটর ব্যবহার বিধি
- 18 হাতে কলমে হিসাব করা
- 19 কয়েলের টার্ন সংখ্যা নির্ণয়
- 20 সতর্কতা ও কিছু নির্দেশনা
- 21 সমাপ্তি
ট্রান্সফরমার কাকে বলে
আমরা জানি, পাওয়ার ট্রান্সফরমার স্টেপ আপ অথবা স্টেপ ডাউন করতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, ট্রান্সফরমার এর ধরন অনুযায়ী প্রাইমারিতে প্রদত্ত এসি কে সেকেন্ডারিতে বাড়ায় অথবা কমায়।
ট্রান্সফরমার কত প্রকার
কোর এর আকার, ব্যবহার ও কাজের প্রকারভেদে অনেক ধরণের পাওয়ার ট্রান্সফরমার রয়েছে। যেমন,
- ল্যামিনেটেড (E-I) কোর,
- টরোয়ডাল কোর,
- অটো ট্রান্সফরমার,
- ভেরিয়েবল ট্রান্সফরমার।
- এছাড়াও রয়েছে উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সি ফেরাইট কোর ট্রান্সফরমার।
ফেরাইট কোর সাধারণত SMPS ও ডিসি টু ডিসি কনভার্টারে বহুল ব্যবহৃত হয়।
পাওয়ার টান্সফরমার ছাড়াও আরো অনেক রকম ট্রান্সফরমার রয়েছে। যেমন –
- কারেন্ট ট্রান্সফরমার
- ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার,
- পালস ট্রান্সফরমার,
- আরএফ ট্রান্সফরমার,
- অডিও ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
নিচের চিত্রে E-I কোর ট্রান্সফরমার, টরোয়ডাল ট্রান্সফরমার, ভেরিয়েবল ট্রান্সফরমার বা VARIAC এর ছবি দখতে পাচ্ছেন-
আমরা লেমিনেটেড E-I কোর ট্রান্সফরমার ডিজাইন, তৈরী কৌশল ও হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনা করব। ট্রান্সফরমার তৈরী বা ডিজাইন করতে প্রথমে অনেক হিসেব নিকেশ করে নিতে হয়, যা বেশ সময় সাপেক্ষ। এই কাজকে সহজ করতে আপনাদের জন্য একটি স্প্রেডশিট ক্যালকুলেটর দিলাম। এখন মিনিটেই হিসাব করে ফেলতে পারবেন। ক্যালকুলেটর টি লেখার শেষে লিংক আকারে দেয়া আছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ট্রান্সফরমার তৈরির আগে কিছু বিষয় জানা থাকা দরকার। আমাদের দেশে পাওয়ার লাইনে (বাসা-বাড়ির লাইনে) ২২০ ভোল্ট ৫০ হার্জ থাকে। একটি ট্রান্সফরমার কে ঠিক যে ফ্রিকুয়েন্সির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তার চাইতে কম বা বেশি ফ্রিকুয়েন্সিতে কিছুতেই চালানো উচিত নয়। কারন এতে করে ট্রান্সফরমারটিতে ওভার কিংবা লো ভোল্টেজ এফেক্ট এর মত এফেক্ট পড়বে এবং ট্রান্সফরমারটি অনেক গরম হবে, এমনকি সেটি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কিভাবে নির্ণিত হয়
ট্রান্সফরমারের যে কয়েলে ইনপুট ভোল্টেজ দেয়া হয় তাকে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং বা প্রাইমারি কয়েল বলে। আর যে কয়েল থেকে আউটপুট ভোল্টেজ নেয়া হয় তাকে বলে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং বা সেকেন্ডারি কয়েল বলে। প্রাইমারি কয়েলে যখন এসি পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয় তখন প্রাইমারি কয়েলের চতুর্দিকে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স বা তরিচ্চুম্বকীয় আবেশ তৈরি হয়। আর ট্রান্সফরমারের কোর এই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের জন্য একটি পরিবাহী হিসেবে কাজ করে।
নিচের চিত্রে দেখুন সবুজ কালী দিয়ে ম্যাগনেটিক ফ্লাস্ক কে ট্রান্সফরমার এর কোরের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হতে দেখা যাচ্ছে। নীল কালি দিয়ে এর সেকেন্ডারি ও লাল কালী দিয়ে এর প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং দেখানো হয়েছে।
মূলনীতি
ফ্যারাডের সূত্রানুসারে-
একটি পরিবাহী এবং একটি চুম্বকক্ষেত্রে যখন আপেক্ষিক গতি এরূপ বিদ্যমান থাকে যে পরিবাহীটি চুম্বকক্ষেত্রকে কর্তন করে তবে পরিবাহীতে একটি EMF আবিষ্ট হয়। যার পরিমান ফ্লাক্স কর্তন এর বা ফ্লাক্স পরিবর্তনের হারের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক।
কোরের মাধ্যমে এই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স সেকেন্ডারি কয়েলে আবিষ্ট হয়ে ভোল্টেজ ও কারেন্ট তৈরি করে।
ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন অংশ সমূহ
নিচে এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমূহের বর্ণনা করা হলো।
কোর
ম্যাগনেটিক মেটারিয়াল দিয়ে তৈরী হয় এটি। বিভিন্ন আকার ও গঠনের হয়ে থাকে। যেমন, E-I কোর, U-T কোর, EE কোর, টরোয়ডাল কোর ইত্যাদি। নিচের চিত্রে টরোয়েড কোর ও E-I কোর দেখতে পাচ্ছেন-
কন্ডাক্টর
সাধারণত এনামেল ইন্সুলেশন যুক্ত কপার কন্ডাক্টর ব্যবহৃত হয়। এলুমিনিয়াম তার ও ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টরের ব্যাস কপার কন্ডাক্টরের ব্যাসের 1.26 গুন বেশি হতে হবে। কারণ এলুমিনিয়াম তারের কারেন্ট কন্ডাক্টিভিটি কপারের 61%।
ববিন
ববিন এর উপরে কন্ডাক্টরকে কয়েল আকারে পেঁচানো হয়। বিভিন্ন আকারের প্লাস্টিকের ববিন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সঠিক মাপের ববিন বাজারে কিনতে না পাওয়া গেলে হার্ড বোর্ড, ফাইবার বোর্ড ইত্যাদি দিয়ে নিজেও তৈরি করে নিতে পারেন। নিচের চিত্রে বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন সাইজের ববিন এর চিত্র দেখানো হলো-
হাতে তৈরি ববিনের চিত্র নিচে দেখা যাচ্ছে-
মন্তব্য সমুহ