পাথর
Md. Ashraful Haque, 17-Nov-2012
ভিউ : 110776
![](/storage/blogimage/2018/11/stone.jpg)
পাথর (Stone) আমাদের দেশে প্রাপ্ত পাথর সাধারণত রাস্তা তৈরি এবং স্টোন চিপস হিসেবে নির্মাণকাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। সৌন্দর্যের জন্য যে পাথর ব্যবহৃত হয় তা বেশির ভাগ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত। এ অধ্যায়ে পাথর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ৩.১ পাথর পাথর সাধারণ ভূ-ত্বক ও এর রূপান্তর বিশেষ। বহুবিধ খনিজ পদার্থের জটিল রাসায়নিক যৌগ হলো পাথর। পৃথিবী গঠনকারী খনিজের যৌগই হলো শিলা (Rock) । আর নির্মাণ কাজে ব্যবহারযোগ্য নির্দিষ্ট আকার-আকৃতির প্রাকৃতিক শিলাখন্ডই হলো পাথর। পাথর অতিশয় মজবুত ও টেকসই। এটি সন্তোষজনকভাবে আবহক্রিয়া রোধ করে, ক্ষয়প্রাপ্তের হার কম এবং এর সংরক্ষা খরচও কম। একইসাথে এটা অনিন্দ সুন্দরও। কোন প্রতিদ্বন্দী সামগ্রী পাথরের মতো স্থায়ী হয় না। এ জন্য পাথরকে নির্মাণসামগ্রীর রাজা বলা হয়। ৩.২ পাথরের শ্রেণিবিভাগ পাথরকে তিনটি শ্রেণিবিভাগ অনুসারে বিভক্ত করা যায়। যথা- (ক) ভূ-তাত্ত্বিক শ্রেণিবিভাগ (Geological classification) (খ) ভৌত শ্রেণিবিভাগ (Physical classification) (গ) প্রকৌশল বা রাসায়নিক শ্রেণিবিভাগ (Engineering or Chemical classification) (ক) ভূ-তাত্ত্বিক শ্রেণিবিভাগ : এই শ্রেণিবিভাগ অনুসারে পাথরকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks) : আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে উৎক্ষিপ্ত গলিত লাভা বা ভূ-অভ্যন্তরস্থ গলিত লাভা ক্রমে ঠান্ডা হয়ে জমাট বাঁধে এবং এ শিলা গঠিত হয়। যেমন- গ্রানাইট, ব্যাসল্ট, ডুলেরাইট প্রভৃতি এ পাথরের আওতাভুক্ত।
- পাললিক শিলা (Sedimentary rocks) : আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে স্তূপ আকারে নদী বা ঝরনার তলদেশে জমা হয়। পরে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা চাপে জমাট বেঁধে এ পাথর গঠিত হয়। যেমন- বেলেপাথর, চুনাপাথর, লেটারাইট, শেল প্রভৃতি এ পাথরের আওতাভুক্ত।
- রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks) : ভূ-পৃষ্টের অভ্যন্তরীণ তাপ বা চাপে আগ্নেয় ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে এ শিলা গঠিত হয়। যেমন- কোয়ার্টজাইট, স্লেট, মার্বেল প্রভৃতি এ পাথরের আওতাভুক্ত।
![](http://need4engineer.com/wp-content/uploads/2018/11/stone-300x169.png)
- স্তরিভূত শিলা (Stratified Rocks) : এ পাথরের কণাগুলো বিভিন্ন তলে স্তরীভূত অবস্থায় থাকে এবং সহজেই এই তলে এদেরকে আলাদা করা যায়। যেমন- পাললিক শিলা।
- অস্তরিভূত শিলা (Unstratified rocks) : এ পাথরের কণাগুলো স্তরীভূত অবস্থায় থাকে না এবং এদের গঠন স্ফটিক দানাদার বা দৃঢ় দানাদার হয়ে থাকে। যেমন- আগ্নেয় এবং পাললিক শিলা।
- পত্র-সদৃশ শিলা (Foliated Rocks) : কোনো একটি নির্দিষ্ট দিকে ভেঙে পড়ার প্রবণতা থাকে। যেমন-রূপান্তরিত শিলা।
- বালিজাত শিলা (Silicious rocks) : সিলিকা বা বিশুদ্ধ বালির পরিমাণ বেশি থাকে। খুব শক্ত, মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী এবং আবহাওয়াজনিত কারণে সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। যেমন- গ্রানাইট, কোয়ার্জাইট, ট্রাপ, বেলেপাথর ইত্যাদি।
- কাদাজাত শিলা (Argellaceous Rocks) : কাদার পরিমাণ বেশি থেকে । এ পাথর খুব ঘন, দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু ভঙ্গুর হয়। যেমন- স্লেট, ল্যাটেরাইট ইত্যাদি।
- চুর্ণকজাত শিলা (Calcareous rocks) : ক্যালসিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ বেশি থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর স্থায়িত্ব নির্ভর করে। যেমন- মার্বেল, চুনাপাথর, কংকর, গ্রাভেল ইত্যাদি।
- কাঠামো : পিয়ার, এবাটমেন্ট, বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, লাইট হাউজ, সড়ক, দালান ( ভিত্তি, দেয়াল, কলাম, লিন্টেল, আর্চ, ছাদ, ফ্লোর, ডিপিসি ইত্যাদি) তৈরিতে পাথর ব্যবহৃত হয়।
- ফেস ওয়ার্ক : যে কোনো কাঠামোকে পাথর জমকালো আকর্ষণীয় করে তোলে। দেয়াল বা মেঝে অলংকরণের কাজে পাথর ব্যবহৃত হয়।
- পেভিং এর কাজ : আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং কলকারখানার ফ্লোর, রাস্তা, ফুটপাথ ইত্যাদির পেভিং এর কাজে পাথর ব্যবহৃত হয়।
- বিবিধ : পাথরকে ভেঙে কংক্রিট, রাস্তার খোয়া, রেলওয়ের ব্যালাস্ট, ব্লাস্ট ফারনেসের ফ্লাস্ক, ক্যালকারিয়াস সিমেন্ট, কৃত্রিম পাথর, হলো ব্লক তৈরির কাজে পাথর ব্যবহৃত হয়।
- পাথরের গঠণশৈলী খুব মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
- গ্রথনশৈলী সমসত্ব ও কেলাসিত হবে।
- পাথর সমসত্ব বর্ণের হবে।
- সরন্ধ্র বা ছিদ্রযুক্ত পাথর ব্যবহার করা ঠিক নয়।
- পানি শোষন ক্ষমতা খুবই কম হবে।
- চাপ বল প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
- ঘনত্ব ও আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশী হবে।
- ঘর্ষণের কারনে সৃষ্ট ক্ষয় প্রাতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী হবে।
- ভালো পাথর তরল প্রবেশে অভেদ্য হবে।
- পাথর তাপ কুপরিবাহী এবং এর বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা খুবই কম।
মন্তব্য সমুহ