টিম্বার, পর্ব-১
Md. Ashraful Haque, 17-Nov-2012
ভিউ : 43402

অনেক প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে কাঠ ব্যবহার করে আসছে। কাঠ দিয়ে ঘর নির্মাণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের জাহাজ পর্যন্ত নির্মাণ করা হতো। বর্তমানকালেও কাঠ নির্মাণকাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ অধ্যায়ে টিম্বার সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। টিম্বার বৃক্ষ হতে গৃহ নির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরী বা অন্যান্য প্রকৌশলগত কাজের উপযোগী যে কাঠ সংগ্রহ করা হয় তাকে টিম্বার বলে। কমপক্ষে ৬০ সেন্টিমিটার ব্যাসের বৃক্ষ থেকে প্রকৌশল কাজের উপযোগী নির্দিষ্ট আকার-আকৃতির টিম্বার পাওয়া যায়। প্রায় ৯৯% জৈব পদার্থ এবং প্রায় ১% অজৈব পদার্থ দ্বারা টিম্বার গঠিত। শুষ্ক টিম্বারের জৈব অংশে কার্বন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রকার টিম্বার ক) টিম্বার প্রধানত চার প্রকার। যথা-
- স্ট্যানডিং টিম্বার (Standing Timber) : জীবিত গাছ থেকে যে টিম্বার সংগ্রহ করা হয়, স্ট্যানডিং টিম্বার তাকে বলে।
- রাফ টিম্বার (Rough Timber) : যখন গাছ কেটে ফেলা হয় তখন তাকে রাফ টিম্বার তাকে বলে।
- লগ টিম্বার (Log Timber / Log) : নির্দিষ্ট মাপে খন্ড করা বাকল অপসারিত গাছের কান্ডকে লগ টিম্বার বলে।
- কনভার্টেড টিম্বার (Converted Timber) : লগকে বাজার আকৃতিতে চেরাই করে প্রাপ্ত কাঠকে কনভার্টেড টিম্বার বলে। যেমন- তক্তা, ব্যাটেন, বিম, খুঁটি, চৌকাঠ, রাফটার ইত্যাদি।
- নরম কাঠ (Soft wood) : এ ধরনের কাঠের অাঁশগুলো দৃঢ়াবদ্ধ নয়। ওজনে হালকা এবং টান প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ভারী প্রকৌশল কাজে ব্যবহৃত হয় না। যেমন- দেবদারু, তুলা, পাইন, হেমলক ইত্যাদি গাছের কাঠ।
- শক্ত কাঠ (Hard wood) : এ ধরনের কাঠের অাঁশগুলো খুবই দৃঢ়াবদ্ধ। ওজনে ভারী এবং টান প্রতিরোধে সক্ষম। প্রকৌশল কাজের জন্য বিশেষ উপযোগী। শাল, সেগুন, সুন্দরী, গামারি, শিশু, কাঁঠাল, জাম, শীলকোড়ই, মেহগণি ইত্যাদি গাছের কাঠ।
- সারি কাঠ (Hart wood) : লগের ভেতরের দিকে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত গাঢ় বর্ণের শক্ত অংশের কাঠকে সারি কাঠ বলে। এ কাঠ মজবুত ও টেকসই। পোকা-মাকড় বা ঘুণ এ কাঠের ক্ষতি করতে পারে না। স্থায়ী কাঠের কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রকৌশল কাজের জন্য বিশেষ উপযোগী।
- অসারি কাঠ (Sap wood) : লগের বাহিরের দিকে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত হালকা বর্ণের নরম অংশের কাঠকে অসারি কাঠ বলে। এ কাঠ খুবই দুর্বল। পোকা-মাকড় বা ঘুণ এ কাঠের সহজেই ক্ষতি করতে পারো। অস্থায়ী কাঠের কাজে ব্যবহার করা হয়। স্থায়ী প্রকৌশল কাজের জন্য উপযোগী নয়।
- কাঠের রং দেখতে হবে। যদিও গাছ থেকে গাছে রঙ পরিবর্তন হয়। কিন্তু এক জাতীয় গাছের রঙ এ একটা মিল থাকে। রঙ এর মাত্রা হয়তো পরিবর্তন হয় কিন্তু গুণগতমান পরিবর্তন হয় না।
- কাঠের আঁশের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আঁশগুলো ঘন না হালকা, বড় না মিহি সহজে আলাদা করা যায় কি না ইত্যাদি। ছিদ্রগুলো দূরে দূরে না এক জায়গায়। আঁশগুলো সোজা না ঢেউয়ের মত। আঁশগুলো সুষম ডোরা কাটা না বুদবুদের মতো।
- বার্ষিক রিং আলাদা স্পষ্ট।
- রং সর্বত্র হালকা।
- সহজে আগুন ধরে।
- গঠন আঁশযুক্ত এবং সহজে আঁশ ছাড়ানো যায়।
- নরম, দুর্বল, ভঙ্গুর এবং ওজনে হালকা।
- হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে মৃদু আওয়াজ হয়।
- বার্ষিক রিং অস্পষ্ট এবং পার্থক্য করা যায় না।
- সহজে আগুন ধরে না।
- রং অধিকতর গাঢ়।
- গঠন আঁশহীন বা আঁশগুলি মিহি এবং ঘন।
- গাছগুলো উঁচু ও মোটা।
- শক্ত ও ওজনে ভারী।
- টান, চাপ এবং শিয়ার সব বলেই সমান শক্তিশালী।
- হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে জোরে শব্দ হয়।
