টিম্বার, পর্ব-২
Md. Ashraful Haque, 17-Nov-2012
ভিউ : 68099

টিম্বার ও কাঠের মধ্যে পার্থক্য মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে টিম্বার এবং কাঠকে বোঝানো হয়। কখনও কখনও দুটো এক অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রকৌশল শিক্ষায় দু’টোকে একটু আলাদাভাবে দেখা হয়। নিম্নে এদের পার্থক্য দেওয়া হলো-
টিম্বার | কাঠ |
টিম্বারের তিন প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। যথা-
|
বিম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কাঠেরও তিন প্রকার অর্থ পাওয়া যায়। যথা-
|
টিম্বারের নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহার উপযোগী এবং নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হতে হয়। | সাধারণ অর্থে যে কোন গাছ থেকে যে কোনো ব্যবহার উপযোগী কাঠ পাওয়া যায়। |
কাঠ উত্তমরূপে নির্দিষ্ট আদর্শ মাপে কেটে বা চিরে সিজনিং করে প্রকৌশল কাজে ব্যবহার উপযোগী টিম্বার পাওয়া যায়। | বন-জঙ্গল থেকে বা গাছ কেটে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার উপযোগী কাঠ সংগ্রহ করা হয়। |
- গাছ হতে কাঠকে আলাদা করার সাথে সাথে সিজনিং করে কাঠকে প্রাথমিক পচন, ছত্রাক আক্রমণ এবং পোকামাকড়ের হাত হতে রক্ষা করা।
- কাঠকে বিভিন্ন প্রকার দোষ-ক্রটি, যেমন- বাঁকানো হতে রক্ষা করা।
- নির্দিষ্ট মাত্রায় জলীয় কণা হ্রাস করা এবং স্যাপ শুকিয়ে সংরক্ষণকারী উপাদান প্রয়োগে উপযোগী করা।
- আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনে টিম্বারের সংকোচন ও প্রসারণ হওয়ার সম্ভবনা হ্রাস করা।
- স্থানান্তর এবং উত্তোলন সুবিধার জন্য ওজন হ্রাস করা।
- কাঠকে শক্তিশালী, নিরাপদ এবং টেকসই করা।
- কাঠকে সহজে কার্যোপযোগী, মসৃণ, রং ও পলিশ করার উপযোগী করা।
- কাঠের ইলেকট্রিক্যাল এবং থারমাল ইনসুলেশন গুণাবলীর উন্নতি করা।
- কাঠের মূল্যমান বৃদ্ধি করা।
- প্রাকৃতিক সিজনিং (Natural Seasoning)
- কৃত্রিম সিজনিং (Artificial Seasoning)
- কাঠকে কমপক্ষে আনুভূমিকভাবে রেখে ২৫ মিমি দূরে দূরে রেখে স্তরে স্তরে সাজিয়ে মজবুত এবং নিরাপদ মাচা তৈরি করা হয়।
- উল্লম্বভাবে ৬০০-১২০০ মিমি দূরত্বে একই কাঠ বা নিষ্ক্রিয় কোনো জিনিস যেমন- প্লাস্টিক ইত্যাদি দ্বারা মাচা খাড়া করা হয়।
- মাচার উপরে কোনো বোর্ড দ্বারা ঢেকে দিতে হবে যাতে উপরের কাঠ দ্রুত শুকিয়ে না যায়।
- মাচাকে কোনো ছাউনির নিচে তৈরি করা হয় যাতে সরাসরি রোদ না লাগে।
- মাচাকে যথেষ্ট উঁচুতে তৈরি করতে হবে যাতে ভালোমতো বাতাস চলাচল করতে পারে এবং মাটি হতে কোন আর্দ্রতা প্রবেশ না করে।
- দুই থেকে তিন মাস পরপর কাঠগুলোকে উল্টিয়ে দিতে হবে যাতে সব কাঠ ঠিকমতো শুকায়।

- কাঠের গুঁড়িগুলোকে ছাল ছাড়িয়ে পানির নিচে ৩ থেকে ৫ সপ্তাহ ডুবিয়ে রাখা হয়।
- সূর্যের আলো যাতে নিমজ্জিত কাঠের গায়ে না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- ধীরে ধীরে কাঠের স্যাপ বা তরল উপাদান বের হয়ে পানির সাথে মিশে যায়।
- কাঠগুলোকে পরে পানি হতে তুলে ছাউনির নিচে স্তরে স্তরে রেখে বাতাসে শুকানো হয়।
- কাঠের শক্তি কিছুটা কমে গেলেও এ পদ্ধতিতে সিজনিং-এ সময় অনেক কম লাগে।

-
- এ পদ্ধতিতে কাঠকে ফুটন্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।
- পানি থেকে তুলে পরে বাতাসে শুকালে কাঠ কাজের উপযোগী হয়।
- ব্যয় সাপেক্ষ কিন্তু সময় তুলনামূলক কম লাগে।
- কাঠের শক্তি কিছুটা কমে যায়।
-
- খড়, শুকনো পাতা বা করাত গুঁড়া ইত্যাদি জ্বালিয়ে তার ধোঁয়ায় কাঠ শুকানো হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ শুকাতে অনেক সময় লাগে কিন্তু কাঠে চিড় ধরে না।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ টেকসই এবং বিনাশরোধী হয়।
-
- কাঠকে ইউরিয়া মিশানো পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হয়।
- এরপর কাঠকে চুল্লিতে সিজনিং করা হয়।
- এতে করে সিজনিং দ্রুত হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রং অপরিবর্তিত থাকে।
- এ পদ্ধতি ব্যয় সাপেক্ষ কিন্তু উৎকৃষ্ট পদ্ধতি।

-
- বিদ্যুৎ প্রবাহ ব্যবহার করেও কাঠকে সিজনিং করা হয়।
- এ পদ্ধতিতে কাঠ সিজনিং এ সময় অনেক কম লাগে।
- কাঠের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে কাঠে সামান্য তাপের সৃষ্টি হয় এবং কাঠ শুকায়।

-
- এ পদ্ধতিতে অবিরাম কাঠ বোঝাই করা, বিশুদ্ধ করা এবং বিশুদ্ধ কাঠ নির্গমনের ব্যবস্থা থাকে।
- বাণিজ্যিকভাবে এ পদ্ধতি খুবই সুবিধাজনক।
- এ চুল্লি এমনভাবে নির্মিত যে, কাঁচা কাঠ চুল্লিতে বোঝাই ও বাহন এর সরবরাহ পথে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে নির্গমন পথের দিকে যত অগ্রসর হয়, কাঠগুলোও তত শুষ্ক হতে থাকে।
- নির্গমন পথ থেকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবেশপথে পুনসঞ্চালন করা হয়। ফলে অবিরাম সিজনিং প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
- ব্রাশ শোধন প্রণালীঃ এ প্রণালীতে ব্রাশের সাহায্যে ২ থেকে ৪ প্রলেপ ক্রিয়োজোট তেল বা তৈল রঙ প্রয়োগ করে সচরাচর টিম্বার শোধন করা হয়। ক্রিয়োজোট প্রয়োগের আগে গরম করে নেয়া হয়। ফলে এর সান্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবহার সহজ হয়। সাধারণ ইমারতের ঋতুসহ টিম্বারে সচরাচর তৈল রঙ প্রয়োগ করা হয়।
- নিমজ্জন প্রণালীঃ এ প্রণালীতে সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষক পূর্ণ আধারে টিম্বার কয়েক মিনিটের জন্য নিমজ্জিত রাখা হয়। পোল, পোস্ট প্রভৃতির নিম্নভাগে এ পদ্ধতিতে সংরক্ষক প্রয়োগ করে কীটপতঙ্গের আক্রমন থেকে রক্ষা করা হয়।
- চাপ প্রয়োগ প্রণালীঃ এ পদ্ধতিতে বদ্ধ সিলিন্ডারের মধ্যে উচ্চ তাপে চাপ প্রয়োগ করা হয় বা শূন্যতা সৃষ্টি করে পরিশোধন করা হয়। এ পদ্ধতিটি অতীব কার্যকর।
- বার্ণিস প্রয়োগ প্রণালীঃ কাঠের তৈরি দরজা-জানালা বা কম দামি আসবাবপত্রে তিসির তেলে বিভিন্ন রং এবং মূল্যবান আসবাবপত্রে স্পিরিট দ্বারা তৈরি বার্ণিশ প্রয়োগে এদের সংরক্ষণ করা হয়। রং ও বার্নিশের ব্যবহার আসবাবপত্রে সৌন্দর্যের পাশাপাশি পোকামাকড়ের হাত হতে রক্ষা করে। ব্রাশের দ্বারা দুই বা চার প্রলেপ আলকাতরা প্রয়োগ করলে তা সহজেই একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে। সাধারণত দরজা জানালার চৌকাঠ, কাঠের খুঁটি, নৌকা ইত্যাদিতে আলকাতরা ব্যবহার করা হয়।