ইট বা ব্লকে গাঁথুনির কাজ
Md. Ashraful Haque, 17-Nov-2012
ভিউ : 113148
এ অধ্যায়ে ইট বা ব্লকে গাঁথুনির কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। দেয়াল গাঁথুনি (Masonry Wall) নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর, ইট, কংক্রিট, কংক্রিট ব্লককে একত্রে সুশৃঙ্খলভাবে একের পর এক স্তরে স্তরে মসলার সাহায্যে সাজিয়ে সুষম ভার বহনযোগ্য ও শক্তিশালী যে নির্মাণকাজ করা হয় তাকে গাঁথুনি বা ম্যাশনারি বলে এবং দেয়ালে এই জাতীয় নির্মাণ কাজকে দেয়াল গাঁথুনি বলে। সংক্ষেপে মসলা দ্বারা ইট, পাথর এবং ব্লককে যুক্ত করে নির্মিত দেয়াল নির্মাণ কাজকে দেয়াল গাঁথুনি বলে। দেয়ালের প্রকারভেদ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে দেয়াল দুই প্রকার :
- লোড বিয়ারিং ওয়াল : যে সমস্ত দেয়াল কাঠামোর লোড বহন করে তাকে লোড বিয়ারিং দেয়াল বলে।
- ননলোড বিয়ারিং ওয়াল : যে সমস্ত দেয়াল কাঠামোর লোড বহন করে না তাকে ননলোড বিয়ারিং দেয়াল বলে।
- স্টোন ম্যাশনারি (Stone Masonry)
- ব্রিক ম্যাশনারি (Brick Masonry)
- হলো ব্লক কংক্রিট ম্যাশনারি (Hallow Block Concrete Masonry)
- রিইনফোর্সড ম্যাশনারি (Reinforced Masonry)
- কম্পোজিট ম্যাশনারি (Composite Masonry)
- লোড বহনকারী সাপোর্ট হিসেবে কাজ করে।
- বড় জায়গাকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে।
- তাপ এবং শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
- আগুন এবং আবহাওয়া হতে রক্ষা করে।
- ফেসিং ব্রিক, চকচকে পাথর, টাইলস ইত্যাদি সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
- ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে।
- স্টোন ম্যাশনারিতে যে পাথর ব্যবহার করা হবে তা শক্ত, মজবুত এবং দীর্ঘ স্থায়িত্ব সম্পন্ন হতে হবে।
- পাথরের উপর আপতিত চাপ উল্লম্বভাবে পড়তে হবে।
- প্রয়োজন অনুযায়ী পাথরকে যথাযথভাবে ড্রেসিং বা কেটে নিতে হবে।
- হেড এবং বন্ড স্টোন কখনও ডাম্বল-এর মতো গোলাকার হওয়া উচিত হবে না।
- লোড বা ভর যাতে সমভাবে ভাগ হয়ে যায় এজন্য গার্ডারের শেষে, ছাদের ট্রাসে বড় সমতল পাথর ব্যবহার করা উচিত।
- ঢালু রিটেইনিং ওয়ালের বেলায় স্টোনের বেডগুলো কোর্সের প্ল্যানের সাথে সমকোণে থাকবে।
- যে দেয়ালে ফাইন ড্রেসিং স্টোন ওয়ার্ক করা হয়েছে তা কাঠের বক্স দিয়ে পরবর্তী নির্মাণকাজের সময় রক্ষা করতে হবে।
- নির্দিষ্ট ফেসে ভালো মানসম্মত মর্টার ব্যবহার করতে হবে।
- স্টোন ম্যাশনারি নির্মাণকাজের অগ্রগতি একই লেভেলে হওয়া উচিত।
- প্লাম্ব বব ব্যবহার করে নতুন তৈরিকৃত দেয়ালের পরীক্ষা করা উচিত।
- স্টোন ম্যাশনারি সেকশনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যা চাপ গ্রহণ করতে পারবে কিন্তু টান সহ্য করতে পারবে না।
- ম্যাশনারি কাজ এর ২৪ ঘন্টা পরে অবশ্যই ২ থেকে ৩ সপ্তাহ কিউরিং করতে হবে।
- যথাসম্ভব ভাঙা পাথর বা ছোট পাথর কুচি ব্যবহার করা যাবে না।
- উঁচুতে কাজ করার সময় ডবল স্ক্যাফোল্ডিং ব্যবহার করতে হবে।
- গাঁথুনির যে ফোকর থাকে তা ভালোমতো মর্টার দিয়ে পূর্ণ করতে হবে যাতে কোনো ফোঁকর সৃষ্টি না হয়।
- ব্যবহারের পূর্বে পাথর ভালোমতো ভিজিয়ে নিতে হবে নতুবা ব্যবহৃত মসলার পানি পাথর টেনে নিবে।
- একটি ভালো ইটের দেয়াল গাঁথুনি পেতে অবশ্যই শক্ত, মজবুত ভালোমতো পোড়ানো, সুষম রং, আদর্শ আকার আকৃতি বিশিষ্ট ইট ব্যবহার করতে হবে।
- ইটকে অবশ্যই ফাটল, ফাঁপা ভাঙা দাগ ছিদ্র অথবা কোনো ত্রুটি/বিচ্যুতিমুক্ত হতে হবে।
- ব্রিক ওয়ার্কে ইট বিছানোর সময় এর ফ্রগ মার্ক উপরের দিকে রাখতে হবে।
- ব্রিক কোর্সগুলো প্রকৃত আনুভূমিকভাবে এবং এর জয়েন্টগুলো প্রকৃতভাবে উলম্ব হতে হবে এবং খাড়া জোড়া পরিহার করতে হবে।
- যতটুকু সম্ভব ইটের খোয়া ব্যবহার করা যাবে না।
- সকল জায়গায় ইটের দেয়াল গাঁথুনি একই লেভেলে অগ্রগতি হতে হবে এবং এক দিনে গাঁথুনির পরিমাণ ১.৫ মিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়।
- ভবিষ্যতে দেয়ালের দৈর্ঘ্য যদি বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা থাকে, তবে দেয়াল টুথিং করে কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
- মসলা নরম থাকা অবস্থায় কমপক্ষে ১২ মিমি গভীরে রেকিং করা হয়। যাতে প্লাস্টারিং এবং পয়েন্টিং কাজে চাবি সৃষ্টি হয়।
- গাঁথুনির কাজ শেষ হলে চুন মসলার বেলায় ২-৩ সপ্তাহ এবং সিমেন্ট মসলার ক্ষেত্রে ১-২ সপ্তাহ কিউরিং করতে হবে।
- অধিকতর উচ্চতায় গাঁথুনির জন্য সিঙ্গেল স্ক্যাফোল্ডিং ব্যবহার করা হয়।
- প্রথমে সম্পূর্ণ বেডের উপর মসলা বিছিয়ে ইটকে আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে বসাতে হবে। যাতে মসলার সাথে লেগে যায়।
- যদি দেয়াল দুই বা ততোধিক ইটের পুরু হয়, তবে প্রত্যেক কোর্সে মসলা দ্বারা বেডিং ও ফ্লাসিং করা ছাড়াও গ্রাউটিং করা উচিত।
- ইটের গাঁথুনির কাজে ইংলিশ বন্ড ব্যবহার করা ভালো। কারণ সমস্ত কাজে একই ধরনের বন্ড ব্যবহার করা যায়।
- ইটের গাঁথুনির কাজ শেষ হলে ২৮ দিন পর প্লাস্টারিং করা উচিত।
- প্রথমে দেয়ালের দুই প্রান্তের ইট বসানোর পর সুতা ধরে মাঝের ইট গুলো বসাতে হবে।
- একটি সুতা টেনে কোর্সের এলাইনমেন্ট ঠিক রাখতে হবে যাতে সকল কোর্স একই লেভেলে নির্মাণ করা হয়।