কাঠামো (Structure)
Md. Ashraful Haque, 18-Mar-2012
ভিউ : 24904
যে কোনো ধরনের ইমারত (যেমন-আবাসিক, বাণিজ্যিক বা অফিস ভবন) ইত্যাদি হোক না কেন এদের স্ট্রাকচারাল অংশগুলো একই রকম। যেমন- ফাউন্ডেশন, কলাম, বিম, লিন্টেল, সানসেড, প্যারাপেট, সিঁড়ি, ছাদ ইত্যাদি। এগুলো হলো একটি ইমারতের মূল কাঠামো। এ অধ্যায়ে স্ট্রাকচার সম্পর্কিত বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। ভিত্তিতল প্রস্তুত পদ্ধতি মাটির নিচে কাঠামোর ভার বহনযোগ্য ফাউন্ডেশন স্থাপনের স্থানকে ভিত্তিতল বলে। এটা ভিত্তির সর্বনিম্নস্থ শক্ত ভূমিতল। ভিত্তিতল প্রস্তুতের উদ্দেশ্য দুটি। যথা-
- ভিত্তিতলের ওপর আরোপিত ভর যদি তার বহন ক্ষমতার সমান বা কম হয় তাহলে শুধু সমান ও সমতল করে ভিত্তিতল প্রস্তুত করলেই চলে।
- ভিত্তিতলের ওপর আরোপিত ভর যদি তার বহন ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় তাহলে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে ভিত্তিতলের ভার বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়।
- সাধারণ খনন (যখন পরিখার গভীরতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত)
- গভীর খনন (যখন পরিখার গভীরতা ১.৫ মিটারের বেশি)
- ভিত্তিতল বা ফুটিং গভীরতা মাটির নিচে ভূমিতল হতে এমন গভীর স্তরে হবে যা কাঠামোর উপর আগত ভারকে সহজেই মাটির গভীরে স্থানান্তরিত করতে পারে। অর্থাৎ মাটির ভার বহন ক্ষমতা (Bearing Capacity) যথেষ্ট হবে।
- এই গভীরতা কাঠামোর দেবে যাওয়া কমাবে এবং সুষম দেবে যাওয়া (Uniform Settlement) নিশ্চিত করবে।
- কাঠামো থেকে আগত ভার যেন ভিত্তির উপর লম্বভাবে পড়ে।
- যথাসম্ভব কলামের বা দেয়ালের কেন্দ্র এবং ভিত্তির কেন্দ্র একই হবে।
- ভিত্তিতলের আকারও গভীরতায় প্রভাব ফেলে।
- ভিত্তি এবং ভিত্তিতল উভয়ের উপাদান স্থায়ী প্রকৃতির হতে হবে।
- প্রধান দেয়াল এমন প্রস্থ বিশিষ্ট হবে যাতে এটা ইমারতের কিছু অংশ যেমন লিনটেল, জানালা এবং ভার বহনকারী দেয়ালের ক্ষেত্রে ইমারতের ভার বহন করতে পারে।
- প্রধান দেয়াল এত মজবুত হবে যা বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা যেমন ঝড়, বন্যা ও শত্রুর হাত হতে রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করবে।
- আমাদের দেশে সাধারণত ব্রিক দিয়ে প্রধান দেয়াল নির্মাণ করা হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দূরত্ব যেমন ১০ ফুট পর পর একটু চওড়া করে পিলার নির্মাণ করতে হয়। এতে দেয়ালের ভার বহন ক্ষমতা বাড়ে।
- সাধারণত গ্রেড বিমের উপর প্রধান দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
- প্রান্তের প্রধান ভারবাহী দেয়ালের নিচে ওয়াল ফুটিং অবশ্যই দিতে হবে।
- প্রধান দেয়াল নির্মাণে গুণগত মানসম্মত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
- প্রথমে দেয়ালের কেন্দ্ররেখা নিরূপণ করতে হবে। এরপর গ্রেড বিমের উপর গ্রাউটিং করে এক স্তর মসলা দেয়ালের প্রস্থ সমান চওড়া করে কুর্নি দ্বারা বিছিয়ে দিতে হবে।
- দেয়ালের দুই প্রান্তে ২টি ইট রেখে তাতে এমনভাবে সুতা টান টান করে বাঁধতে হবে যেন তা দেয়ালের এক পাশে থাকে। সুতার গা ঘেঁষে ইট বিছিয়ে প্রথম স্তর ইট গাঁথুনি করতে হবে যাতে দেয়াল সোজা হয়।
- ইট সমান মাপের থাকে না তাই দেয়ালের পুরুত্ব কম বেশি হলে প্লাস্টার করার সময় সমান করতে হয়।
- প্রতি স্তর গাঁথুনি শেষে পরের স্তর শুরুর আগে এক স্তর মসলা বিছাতে হবে।
- এক দিনে ৪ থেকে ৬ ফুটের অধিক উঁচু দেয়াল নির্মাণ করা যাবে না এবং মসলা সাধারণত ১ : ৬ অনুপাতে হবে।
- ২৪ ঘণ্টা পর কিউরিং করতে হবে। কিউরিং সময় শেষ হলে প্লাস্টার করা উচিত।
- দুই ইটের মাঝখানের জোড়ে কুর্নি দ্বারা মসলা ভালোভাবে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্ট্রেচার বন্ড ব্যবহার করা উচিত।
- ছাদের উপর সীমানার চারপাশের দেয়ালের উপর প্যারাপেট নির্মাণ করা হয়।
- এর প্রস্থ বা পুরুত্ব সাধারণত ১২.৫ সে.মি এবং উচ্চতা ১২.৫ সে.মি থেকে হয়ে থাকে।
- ইটের প্যারাপেটের ক্ষেত্রে মূল দেয়ালের মতো বন্ড গাঁথুনি করা হয়।
- প্রতি ৩ মিটার পর পর ২৫ x ২৫ সে.মি মাপের পিলার স্থাপন করে প্যারাপেট দেয়ালকে মজবুত করা যায়।
- ছাদ ঢালাই শেষ হলে প্যারাপেট দেয়াল নির্মাণ করতে হয়।
- বর্তমানে এই উচ্চতার কংক্রিটের, ঢালাই লোহা বা স্টেইনলেস স্টিলের প্যারপেটও তৈরি করা হয়।
- ফর্ম ওয়ার্ক তৈরি: স্ট্রাকচারাল ড্রইং পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত মাপ ও তথ্য অনুসারে ফর্ম ওয়ার্ক যথেষ্ট মজবুত ও সমতল হতে হবে।
- রি-ইনফোর্সমেন্ট স্থাপন: স্ট্রাকচারাল ড্রইং ও প্রদত্ত মাপমতো রড কেটে সোজা করতে হবে এবং হুক ক্রাংক ও স্টিরাপ তৈরি করতে হবে। অতঃপর সেগুলোকে ড্রইং অনুযায়ী জি. আই. তার দিয়ে বেঁধে ফর্ম ওয়ার্কের ভিতর স্থাপন করতে হবে। রডের তলায়, উপরে ও পাশে ব্লক বসিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন সাটারিং বা ফর্ম ওয়ার্ক ঠিক থাকে।
- কংক্রিট ঢালাই: রড স্থাপন যথাযথ হলো কি না পরীক্ষা করে দেখার পর ঢালাই কাজ শুরু করা যাবে। সঠিক অনুপাতে কংক্রিট ঢালাই করতে হবে। পানি-সিমেন্ট অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ঢালাই কাজ বিমের যে কোনো এক প্রান্ত থেকে শুরু করতে হবে। নতুন কংক্রিটের মধ্যে ভাইব্রেটর দিয়ে বা ১৬ মি.মি. ব্যাসের রড দিয়ে কম্পাকশন করতে হবে। বিমের গভীরতার ছাদের পুরুত্ব পরিমাণ ঢালাই দেওয়া যাবে না যা পরে ছাদ ঢালাইয়ের সময় একত্রে ঢালাই করতে হবে। অনেক সময় বিম এবং ছাদ একত্রে মনোলিথিকভাবেও ঢালাই দেওয়া হয়।
- কিউরিং: যে কোনো কংক্রিটের কাজে কিউরিং অত্যন্ত জরুরি। প্রাথমিকভাবে ২৪ ঘণ্টা পর থেকে কমপক্ষে ৭ দিন কিউরিং করতে হবে। তবে ২৮ দিন কিউরিং করা সবচেয়ে ভালো।
- ফর্ম ওয়ার্ক অপসারণ: ফর্ম ওয়ার্ককে সাবধানতার সাথে সরাতে হবে যাতে বিম ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কংক্রিট ঢালাইয়ের তিন দিন পর বিমের দুইদিকের তক্তা খুলে ফেলা যাবে। আর ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে সমস্ত ফর্ম ওয়ার্ক খুলে ফেলা যাবে।
- কাজ শুরু করার আগে সম্পূর্ণ স্ট্রাকচারাল ড্রইং-এর কলাম শিডিউল দেখে নিতে হবে।
- ফুটিংকে যথাযথভাবে নির্মাণ করতে হবে।
- ভিত্তিতলে রড স্থাপনকালে এর নিচে ব্লক দিয়ে এর ক্লিয়ার কাভার দিতে হবে।
- ভিত্তিতলের ফুটিং-এর রডের সাথে কলামের রড উত্তমরূপে বাঁধতে হবে।
- রড বাঁধাই শেষ হলে ফর্ম ওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
- প্রথমে ১৫ সে.মি এথকে ৩০ সে.মি ঢালাই দিয়ে কলাম কিক অফ তৈরি করতে হবে যাতে কলাম সোজা হয়।
- কলামের পুরোটা একবারে সাটারিং না করে প্রতিবারে ১.৫ থেকে ২ মিটার পর্যন্ত করা উচিত।
- কংক্রিট ঢালাই এর ক্ষেত্রে ডিজাইনে নিদের্শিত অনুপাত (যেমন- ১:১.৫:৩ বা ১:২:৪) অনুসরণ করতে হবে এবং ৩ দিন পর সাটারিং খুলে কিউরিং করতে হবে।
- প্রথম দফা ঢালাইয়ের অন্তত ৭ দিন পর দ্বিতীয় দফা ঢালাই করতে হবে।
- অন্যান্য আর. সি. সি অবকাঠামোর মতো সিঁড়ি নির্মাণের প্রধান ধাপগুলো হলো: ক) ফর্ম ওয়ার্ক বা সাটারিং তৈরি করা। খ) রড স্থাপন করা। গ) কংক্রিট মিশ্রণ এবং ঢালাই করা। ঘ) কিউরিং করা। ঙ) ফর্ম ওয়ার্ক খুলে নেয়া।
- দুটো ল্যান্ডিং এবং এর মধ্যে একটি ফ্লাইটের জন্য একত্রে সাটারিং বা মাচা তৈরি করতে হবে।
- মাচা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সিঁড়ির স্লাবের ঢাল ঠিক থাকে।
- ল্যান্ডিং এবং ফ্লাইটের দুই পাশে তক্তা দিয়ে এবং তক্তার ফাঁক জি. আই. শিট দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
- সাধারণত ইমারতের কলাম, বিম এবং ছাদ ঢালাইয়ের পর সিঁড়ি ঢালাই দেওয়া হয়।
- সিঁড়ির প্রথম তলার ল্যান্ডিং সাধারণত প্রথম তলার দুটি কলামের উপর ভর দেওয়া হয়। এছাড়া বিপরীত দিকে আরও দুটো কলামের উপর সিঁড়ি দিয়ে উঠার পর প্রথম ল্যান্ডিং ভর দেওয়া হয়। মূলত সিঁড়িসহ এই চার কলাম বেষ্টিত ঘরই সিঁড়িঘর।
- স্ট্রাকচারাল ড্রইং অনুযায়ী রড কেটে প্রথমে ফ্লাইটের দৈর্ঘ্য বরাবর এবং পরে ডিস্ট্রিবিউশন রডগুলোকে আড়াআড়িভাবে মাচার উপর স্থাপন করা হয়।
- ক্লিয়ার কাভার দেওয়ার জন্য রডের নিচে ব্লক বসাতে হবে।
- নির্দিষ্ট অনুপাতে গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করে কংক্রিট মিশ্রণ তৈরি করতে হবে।
- ঢালাইয়ের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইব্রেটর ব্যবহার করে কম্পাকশন করতে হবে।
- ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর হতে ২১-২৮ দিন পর্যন্ত কিউরিং করে সাটারিং খুলতে হবে।